ঢাকা ০৯:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেঘনায় বিলুপ্তির পথে বেত – বেতফল

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৬:০০:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০ ২০২ বার পড়া হয়েছে

৫ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম  , এম এইচ বিপ্লব সিকদার :     মেঘনা- কাঠালিয়া নদী বেষ্টিত আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা রুপ সবুজের সমারোহ ও ঝোপঝাড় সমৃদ্ধ কুমিল্লার নিম্নাঞ্চল খ্যাত মেঘনা উপজেলা । বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশ ঝাড়, গাব গাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের মধ্যে একটি ছিলো বেত গাছ। কাঁটাযুক্ত বেত গাছ লতার মতো হলেও এটি নরম প্রকৃতির নয়। এর ফলকে বেত ফল বা বেতুন বলে। আঙ্গুরের মতো থোকা থোকা ফল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পেকে থাকে। দুষ্ট ছেলেমেয়ের দল অনেক কষ্ট শিকার করে এসব বেত ফল সংগ্রহ করে লবণ-মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতো। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বেত ফল কী তা খুঁজতে গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হয়।

এদিকে গ্রামের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেত গাছ। তারা বেত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কৃষকের মাটি কাটার ওড়া, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, ভাত খাওয়ার পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি তৈরি ইত্যাদি কাজে বেত ব্যবহার হয়ে থাকে। আর শহরের অভিজাত শ্রেণীর জন্য চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেণীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। সাবাড় করে দিয়েছে বাড়ির আশপাশের ক্ষুদ্র প্রকৃতির ঝোপঝাড় । তাই মেঘনার গ্রাম থেকে আজ হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান বেত। যাকে গ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় বেতমুড়া বলা হতো। অথচ আজ কয়েক গ্রাম হাঁটলেও একটি বেতমুড়া বা বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যায় না। বেত বনে ছিলো ডাহুক পাখির বাস। সকালে দুপুরে রাতে ডাহুক আপন মনে ডেকে যেত মন মাতানো সুরে।

বেত গ্রামের আনাচে-কানাচে ঝোপ-ঝাড়ে অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রয়েছে বাণিজ্যিক কদর। গ্রামের হাটবাজারে বিক্রির পাশাপাশি তা শহরে ও রয়েছে অনেক চাহিদা । গত কয়েক বছর পূর্বেও জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হাটের দিন গ্রামের কৃষক শ্রেণীর মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতো। আজ আর তা দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করলে  তারা বলেন ওড়া বা ধামার চারিদিক মজবুত করে গিঁট দেয়ার জন্য বেত ব্যবহার করা হতো। আজ বেত অনেকটাই দুস্পপ্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের তৈরি দড়ি বা রশি। তাদের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘর-বাড়ি তৈরি করছে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। কারণ, আগে যেখানে প্রতি বাড়িতেই বেত ঝাড় দেখতে পাওয়া যেত, সেখানে আজ একটি গ্রাম ঘুরলেও পাঁচটি বেতঝাড় খুঁজে পাওয়া যায় না।

তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গ্রামে এখনো যে সকল ক্ষুদ্র ঝোপ-ঝাড় রয়েছে, সেখানে বেত ঝাড় বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করলে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে বলে অনেকেই মনে করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

মেঘনায় বিলুপ্তির পথে বেত – বেতফল

আপডেট সময় : ০৬:০০:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ জানুয়ারী ২০২০

৫ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম  , এম এইচ বিপ্লব সিকদার :     মেঘনা- কাঠালিয়া নদী বেষ্টিত আবহমান গ্রাম বাংলার চিরচেনা রুপ সবুজের সমারোহ ও ঝোপঝাড় সমৃদ্ধ কুমিল্লার নিম্নাঞ্চল খ্যাত মেঘনা উপজেলা । বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশ ঝাড়, গাব গাছসহ অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছের মধ্যে একটি ছিলো বেত গাছ। কাঁটাযুক্ত বেত গাছ লতার মতো হলেও এটি নরম প্রকৃতির নয়। এর ফলকে বেত ফল বা বেতুন বলে। আঙ্গুরের মতো থোকা থোকা ফল চৈত্র-বৈশাখ মাসে পেকে থাকে। দুষ্ট ছেলেমেয়ের দল অনেক কষ্ট শিকার করে এসব বেত ফল সংগ্রহ করে লবণ-মরিচ দিয়ে ভর্তা বানিয়ে তা খুব মজা করে খেতো। বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের বেত ফল কী তা খুঁজতে গাছের বিশ্বকোষ চষে বেড়াতে হয়।

এদিকে গ্রামের কৃষক শ্রেণীর অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেত গাছ। তারা বেত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কৃষকের মাটি কাটার ওড়া, বিশেষ কাজে ব্যবহারের জন্য ঝাঁকা বা ধামা বা টুকরি তৈরি, নারীদের তৈরি শীতল পাটি, নামাজের পাটি, ভাত খাওয়ার পাটি, হাত পাখা, হাতের লাঠি তৈরি ইত্যাদি কাজে বেত ব্যবহার হয়ে থাকে। আর শহরের অভিজাত শ্রেণীর জন্য চেয়ার, সোফা, দোলনা, ফুলদানি তৈরিসহ নানা কাজে বেতের অনেক কদর। বেত একটি মূল্যবান, টেকসই এবং স্মার্ট শ্রেণীর দ্রব্য হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছে। সাবাড় করে দিয়েছে বাড়ির আশপাশের ক্ষুদ্র প্রকৃতির ঝোপঝাড় । তাই মেঘনার গ্রাম থেকে আজ হারিয়ে যাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান বেত। যাকে গ্রামে আঞ্চলিক ভাষায় বেতমুড়া বলা হতো। অথচ আজ কয়েক গ্রাম হাঁটলেও একটি বেতমুড়া বা বেতঝাড় দেখতে পাওয়া যায় না। বেত বনে ছিলো ডাহুক পাখির বাস। সকালে দুপুরে রাতে ডাহুক আপন মনে ডেকে যেত মন মাতানো সুরে।

বেত গ্রামের আনাচে-কানাচে ঝোপ-ঝাড়ে অযত্নে বেড়ে উঠলেও তার রয়েছে বাণিজ্যিক কদর। গ্রামের হাটবাজারে বিক্রির পাশাপাশি তা শহরে ও রয়েছে অনেক চাহিদা । গত কয়েক বছর পূর্বেও জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে হাটের দিন গ্রামের কৃষক শ্রেণীর মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসতো। আজ আর তা দেখা যায় না।

এ ব্যাপারে পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করলে  তারা বলেন ওড়া বা ধামার চারিদিক মজবুত করে গিঁট দেয়ার জন্য বেত ব্যবহার করা হতো। আজ বেত অনেকটাই দুস্পপ্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের তৈরি দড়ি বা রশি। তাদের মতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘর-বাড়ি তৈরি করছে। এতে যেমন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। কারণ, আগে যেখানে প্রতি বাড়িতেই বেত ঝাড় দেখতে পাওয়া যেত, সেখানে আজ একটি গ্রাম ঘুরলেও পাঁচটি বেতঝাড় খুঁজে পাওয়া যায় না।

তাই প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা ও বাণিজ্যিক প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গ্রামে এখনো যে সকল ক্ষুদ্র ঝোপ-ঝাড় রয়েছে, সেখানে বেত ঝাড় বৃদ্ধির জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করলে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে বলে অনেকেই মনে করেন।