ঢাকা ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ জুলাই ২০২৪, ৫ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই সাংবাদিককে মারধর করা সেই এএসআই প্রত্যাহার

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০২:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০ ১৬৩ বার পড়া হয়েছে

২৭ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :

দুই সাংবাদিককে মারধরকারী ডিএমপি’র শাহবাগ থানার সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মামুন হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান। অভিযুক্ত এএসআই মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ডিএমপির কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২০ জানুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যায় মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে মোটরসাইকেলযোগে পান্থপথে কর্মস্থল বাংলা ট্রিবিউন অফিসে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ- এর স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) সাজ্জাদ মাহমুদ খান ওরফে সাজ্জাদ হোসেন। তারা পরীবাগ লিংক রোড পার হওয়ার সময় যানজটে আটকা পড়েন। এসময় বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসা শাহবাগ থানার এএসআই মামুন হোসেন তার (সাংবাদিক জাহাঙ্গীর) ডান পায়ে চাপা দেয়। জাহাঙ্গীর ও সাজ্জাদ এর প্রতিবাদ করলে এএসআই মামুন ইচ্ছাকৃতভাবে আরও দুই-তিনবার মোটরসাইকেলের পিকআপ বাড়িয়ে তার পায়ে আঘাত করতে থাকে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। পুলিশ সদস্যের এই অপেশাদার আচরণের প্রতিবাদ করলে তাদের হত্যার হুমকি দেন এএসআই মামুন। তবে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

এসময় পথচারী এবং আশপাশের দোকানদাররা ঘটনাস্থলে জড়ো হলে সাংবাদিক জাহাঙ্গীরকে লাথি মেরে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। পরে থানায় খোঁজ নিয়ে তার নাম ও পরিচয় জানা যায়।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় একট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত এএসআই মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করতেন এএসআই মামুন

এএসআই মামুনের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে জালিয়াতি করে ডিএমপি কমিশনারের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট ব্যবহার করতেন তিনি। ঘটনার পর ওই নম্বর প্লেটের (ঢাকা মেট্রো হ-১২-৭৫০৫) সূত্র ধরে বিআরটিএ তে অনুসন্ধান করে জানা যায়, গাড়িটি ডিএমপি কমিশনারের নামে নিবন্ধন করা। ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ জানায়, এটিএসআই আলী আফজাল মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেন। তবে গাড়িটি রাজারবাগ ট্রাফিক ব্যারাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, আলী আফজাল জানান, মোটরসাইকেলটি তার নামে বরাদ্দ দেওয়া, তবে নষ্ট হওয়ায় দেড় বছর ধরে গাড়িটি রাজারবাগ ট্রাফিক ব্যারাকে রাখা আছে।

এদিকে, ওই মোটরসাইকেলটি রাজারবাগ ট্রাফিক ব্যারাকে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও এর নম্বরটি কপি করে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ব্যবহার করতেন শাহবাগ থানার সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মামুন হোসেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এটিএসআই আলী আফজালের নামে বরাদ্দ করা মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটটি নিজের বাইকে ব্যবহারের কথা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেন এএসআই মামুন।

ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদ মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের জন্য কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে এএসআই মামুন যে ব্যবহার করেছেন তা অপেশাদার। আমরা তার শাস্তির দাবি জানাই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

দুই সাংবাদিককে মারধর করা সেই এএসআই প্রত্যাহার

আপডেট সময় : ০২:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২০

২৭ জানুয়ারি ২০২০, আজকের মেঘনা ডটকম, ডেস্ক রিপোর্ট :

দুই সাংবাদিককে মারধরকারী ডিএমপি’র শাহবাগ থানার সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মামুন হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে রমনা বিভাগের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য জানিয়েছেন ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান। অভিযুক্ত এএসআই মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ডিএমপির কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম (৩০)। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২০ জানুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যায় মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টার থেকে মোটরসাইকেলযোগে পান্থপথে কর্মস্থল বাংলা ট্রিবিউন অফিসে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ- এর স্টাফ রিপোর্টার (ক্রাইম) সাজ্জাদ মাহমুদ খান ওরফে সাজ্জাদ হোসেন। তারা পরীবাগ লিংক রোড পার হওয়ার সময় যানজটে আটকা পড়েন। এসময় বিপরীত দিক থেকে দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসা শাহবাগ থানার এএসআই মামুন হোসেন তার (সাংবাদিক জাহাঙ্গীর) ডান পায়ে চাপা দেয়। জাহাঙ্গীর ও সাজ্জাদ এর প্রতিবাদ করলে এএসআই মামুন ইচ্ছাকৃতভাবে আরও দুই-তিনবার মোটরসাইকেলের পিকআপ বাড়িয়ে তার পায়ে আঘাত করতে থাকে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। পুলিশ সদস্যের এই অপেশাদার আচরণের প্রতিবাদ করলে তাদের হত্যার হুমকি দেন এএসআই মামুন। তবে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজের নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানান।

এসময় পথচারী এবং আশপাশের দোকানদাররা ঘটনাস্থলে জড়ো হলে সাংবাদিক জাহাঙ্গীরকে লাথি মেরে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন। পরে থানায় খোঁজ নিয়ে তার নাম ও পরিচয় জানা যায়।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় একট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত এএসআই মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভুয়া নম্বর প্লেট ব্যবহার করতেন এএসআই মামুন

এএসআই মামুনের বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেছে, ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে জালিয়াতি করে ডিএমপি কমিশনারের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট ব্যবহার করতেন তিনি। ঘটনার পর ওই নম্বর প্লেটের (ঢাকা মেট্রো হ-১২-৭৫০৫) সূত্র ধরে বিআরটিএ তে অনুসন্ধান করে জানা যায়, গাড়িটি ডিএমপি কমিশনারের নামে নিবন্ধন করা। ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগ জানায়, এটিএসআই আলী আফজাল মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করেন। তবে গাড়িটি রাজারবাগ ট্রাফিক ব্যারাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, আলী আফজাল জানান, মোটরসাইকেলটি তার নামে বরাদ্দ দেওয়া, তবে নষ্ট হওয়ায় দেড় বছর ধরে গাড়িটি রাজারবাগ ট্রাফিক ব্যারাকে রাখা আছে।

এদিকে, ওই মোটরসাইকেলটি রাজারবাগ ট্রাফিক ব্যারাকে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও এর নম্বরটি কপি করে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলে ব্যবহার করতেন শাহবাগ থানার সহকারী উপরিদর্শক (এএসআই) মামুন হোসেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এটিএসআই আলী আফজালের নামে বরাদ্দ করা মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটটি নিজের বাইকে ব্যবহারের কথা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেন এএসআই মামুন।

ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক শেখ জাহাঙ্গীর আলম ও সাজ্জাদ মাহমুদ খান বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের জন্য কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে এএসআই মামুন যে ব্যবহার করেছেন তা অপেশাদার। আমরা তার শাস্তির দাবি জানাই।’