ঢাকা ০৪:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুরি হওয়া সেই নবজাতককে হত্যা করেন মা

ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৭:২০:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০ ১৯৩ বার পড়া হয়েছে

২৮ নভেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম,

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চুরি হওয়া ১৭ দিনের সেই নবজাতক সোহানা আক্তার হত্যার ঘটনায় মা শান্তা আক্তার পিংকি (১৯) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. খোকন হোসেনের আদালতে শান্তা আক্তার জবানবন্দি দেন।

শিশুটির মা শান্তা ও বাবা সুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শান্তা আক্তার পিংকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বনগঞ্জ গ্রামের ইউনুস মিঞার মেয়ে। দুই বছর আগে সুজনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

এর আগে শিশু সোহানাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শিশুটির বাবা সুজন খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গত ২২ নভেম্বর তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অন্য দুই সন্দেহভাজন চাচা রিপন খান ও ফুফা হাসিব শেখের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতিও চায় পুলিশ।

পেশায় জেলে সুজন খান (৩০) জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ঠাকুর দাস মন্ডল বলেন, গত ২২ নভেম্বর প্রধান সন্দেহভাজন আসামি শিশুটির বাবা সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে গত ২৬ নভেম্বর সুজনকে কারাগার থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের তৃতীয় দিন শুক্রবার সুজনের সামনে তার স্ত্রী শান্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে আসি। তাদের দুজনকে সামনে এনে মুখোমুখি করা হলে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শান্তা তার সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পারিবারিক কলহে তিনি তার সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, হত্যার কারণ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্যউপাত্ত আমরা পাচ্ছি তা হলো শান্তার আগে একটি বিয়ে হয়েছিল এবং তার স্বামী সুজনেরও বিয়ে হয়েছিল। এই দম্পতির আগের ঘরে একটি করে কন্যা সন্তান রয়েছে। শান্তা তার আগের বিয়ে গোপন করেই সুজনকে বিয়ে করেন।

শান্তা তার আগের স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়া অথবা এই ঘরে তার ছেলে সন্তান না হওয়ায় নবজাতক এই সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পারিবারিক কলহে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিশুটির মা শান্তার দেয়া আদালতের জবানবন্দি ও বাবা সুজনের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে খুব শিগগির আদালতে এই প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর রবিবার দিনগত রাতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের জেলে সুজন খানের বাড়ি থেকে বাবা মায়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকা ১৭ দিনের শিশু সোহানা চুরির ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় সোহানার দাদা আলী হোসেন খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি অপহরণের মামলা করেন।

ঘটনার দুই দিন পর ১৭ নভেম্বর ১৭ দিনের শিশু সোহানা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওইদিন দুপুরে পুলিশ বাবা সুজন, চাচা রিপন এবং ফুফা হাসিবকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাবা সুজনকে প্রধান সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

ট্যাগস :

চুরি হওয়া সেই নবজাতককে হত্যা করেন মা

আপডেট সময় : ০৭:২০:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২০

২৮ নভেম্বর ২০২০, আজকের মেঘনা. কম,

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চুরি হওয়া ১৭ দিনের সেই নবজাতক সোহানা আক্তার হত্যার ঘটনায় মা শান্তা আক্তার পিংকি (১৯) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. খোকন হোসেনের আদালতে শান্তা আক্তার জবানবন্দি দেন।

শিশুটির মা শান্তা ও বাবা সুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শান্তা আক্তার পিংকি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলার বনগঞ্জ গ্রামের ইউনুস মিঞার মেয়ে। দুই বছর আগে সুজনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

এর আগে শিশু সোহানাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শিশুটির বাবা সুজন খানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গত ২২ নভেম্বর তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। অন্য দুই সন্দেহভাজন চাচা রিপন খান ও ফুফা হাসিব শেখের ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতিও চায় পুলিশ।

পেশায় জেলে সুজন খান (৩০) জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ঠাকুর দাস মন্ডল বলেন, গত ২২ নভেম্বর প্রধান সন্দেহভাজন আসামি শিশুটির বাবা সুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে গত ২৬ নভেম্বর সুজনকে কারাগার থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের তৃতীয় দিন শুক্রবার সুজনের সামনে তার স্ত্রী শান্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে নিয়ে আসি। তাদের দুজনকে সামনে এনে মুখোমুখি করা হলে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শান্তা তার সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

পারিবারিক কলহে তিনি তার সন্তানকে হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছেন।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, হত্যার কারণ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্যউপাত্ত আমরা পাচ্ছি তা হলো শান্তার আগে একটি বিয়ে হয়েছিল এবং তার স্বামী সুজনেরও বিয়ে হয়েছিল। এই দম্পতির আগের ঘরে একটি করে কন্যা সন্তান রয়েছে। শান্তা তার আগের বিয়ে গোপন করেই সুজনকে বিয়ে করেন।

শান্তা তার আগের স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়া অথবা এই ঘরে তার ছেলে সন্তান না হওয়ায় নবজাতক এই সন্তানকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছেন বলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

পারিবারিক কলহে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিশুটির মা শান্তার দেয়া আদালতের জবানবন্দি ও বাবা সুজনের দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে খুব শিগগির আদালতে এই প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানান পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ নভেম্বর রবিবার দিনগত রাতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের জেলে সুজন খানের বাড়ি থেকে বাবা মায়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকা ১৭ দিনের শিশু সোহানা চুরির ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় সোহানার দাদা আলী হোসেন খান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মোরেলগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি অপহরণের মামলা করেন।

ঘটনার দুই দিন পর ১৭ নভেম্বর ১৭ দিনের শিশু সোহানা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ওইদিন দুপুরে পুলিশ বাবা সুজন, চাচা রিপন এবং ফুফা হাসিবকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বাবা সুজনকে প্রধান সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।